১০০০ কোটির বাজার হাতছাড়া! জোড়া সমস্যায় জেরবার রাজ্যের পোশাক শিল্প

 ১০০০ কোটির বাজার হাতছাড়া! জোড়া সমস্যায় জেরবার রাজ্যের পোশাক শিল্প

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, রফতানি সংক্রান্ত সচেতনতার অভাব এর অন্যতম কারণ। যার প্রসারে উদ্যোগী হতে হবে রাজ্য সরকারকেই। প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোও গড়ে দিতে হবে।

অভিযোগ, রফতানির পণ্য তৈরির পরিকাঠামোরও অভাব আছে রাজ্যে। —প্রতীকী চিত্র।

এক দিকে, পণ্য তৈরির উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব। অন্য দিকে, সেগুলির ঠিক মতো মান পরীক্ষা না করাতে পারা— জোড়া সমস্যায় রফতানির সুযোগ নিতে পারছে না রাজ্যে জামাকাপড় তৈরির বহু সংস্থা। অধিকাংশই ছোট। সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, এর ফলে কমপক্ষে ১০০০ কোটি টাকার বাজার হাতছাড়া হচ্ছে তাদের। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, রফতানি সংক্রান্ত সচেতনতার অভাব এর অন্যতম কারণ। যার প্রসারে উদ্যোগী হতে হবে রাজ্য সরকারকেই। প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোও গড়ে দিতে হবে। না হলে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও রফতানি বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে বাংলা।

পণ্যের মান পরীক্ষা এবং শংসাপত্র পাওয়া সংক্রান্ত বিষয়ের পরামর্শদাতা প্রোগ্রেসিভ ইনোভেটর-এর এমডি-সিইও সুবীর রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘কলকাতাতেই বহু ছোট পোশাক সংস্থা রয়েছে, যাদের জিনিসের মান ভাল। কিন্তু মান পরীক্ষকের স্বীকৃতি ছাড়া সেগুলি রফতানির ছাড়পত্র পাবে না। আর পণ্যের মান পরীক্ষার সময় কারখানার সুরক্ষার পাশাপাশি কর্মীদের বেতন এবং বাধ্যতামূলক ভাবে দেয় পাওনা মেটানো হচ্ছে কি না, তা-ও যাচাই করা নিয়ম। কিন্তু সিংহভাগ সংস্থাই এগুলো পরীক্ষা করাচ্ছে না। ফলে রফতানির স্বীকৃতিও পাচ্ছে না।’’ তাঁর দাবি, কলকাতার খিদিরপুরে জামাকাপড়ের বাজার এশিয়ার বৃহত্তম। প্রায় ৫০০০ ছোট সংস্থা রয়েছে। কিন্তু রফতানির বাজারে তারা প্রায় নেই। একই হাল হাওড়া, বজবজ, সন্তোষপুর এবং অঙ্কুরহাটি অঞ্চলের হাজার খানেক পোশাক সংস্থার। তবে বারাসত-সহ কিছু এলাকার ‘গারমেন্ট পার্কের’ সংস্থাগুলি পণ্যের মান এবং সেই সংক্রান্ত শর্ত পূরণ করে চুটিয়ে রফতানি করছে। তাদের ২৫% পোশাক বিদেশে যায়।

সুবীরের দাবি, ব্রিটেনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ফলে সে দেশে পোশাক রফতানি ২০-৩০ শতাংশ বাড়তে পারে। কারণ তা হবে শুল্কমুক্ত। আগে বসত ১০-১২ শতাংশ। শুল্ক বসবে না ব্রিটেন থেকে সেগুলির কাঁচামাল আমদানিতেও। বিশেষজ্ঞেরা মনে করাচ্ছেন নেপাল-ভূটানে রফতানির সুযোগ খোলার কথাও। সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে সড়ক পথে আমদানি বন্ধ করেছে কেন্দ্র। ওই পথেই ভারত দিয়ে নেপাল-ভূটানে পোশাক রফতানি করত তারা। এখন সমুদ্রপথে পাঠানোর বাড়তি খরচ বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই ফাঁকে নেপাল-ভূটানে বিক্রি বাড়াতে পারে ভারতের সংস্থা। সুবীরের বার্তা, খামতিগুলি দূর করে এই সব সুযোগ নেওয়ার পথ করে দেওয়া হোক রাজ্যের সব সংস্থাকেই।

পোশাক শিল্পের একাংশের অভিযোগ, রফতানির পণ্য তৈরির পরিকাঠামোরও অভাব আছে রাজ্যে। বাংলা রেডিমেড গারমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আলমগীর ফকির বলেন, ‘‘উৎপাদনের পরিকাঠামো তৈরির নানা প্রস্তাব রাজ্যকে দিয়েছি। যেমন সন্তোষপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে একটি কমন ফেসিলিটি সেন্টার এবং একটি এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ন্যান্ট তৈরি। এ ছাড়া জামাকাপড়ের নকশা তৈরির প্রশিক্ষণের জন্য কেন্দ্র স্থাপন করাও জরুরি। রফতানির বাজার ধরার জন্য আমাদের প্রয়োজন সহযোগিতা।’’

Comments